এই গল্পটি আপনাকে সকল সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে সফল হতে শিখাবে । Best Motivational Story..






স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি ! কেউ হয়তো আমরা একটা ভালো সরকারি চাকরি, নিজের বড় ব্যবসা, ভালো শিল্পী অথবা অন্য কিছু হতে চাই। তবে আমরা সবাই কি সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে পারি ? না পারি না ! কিন্তু কেন এমন হয় ? আমরা জানি, সময় কখনো থেমে থাকে না। আর এই সময়ের সাথে সাথে আমাদের বয়স ও বাড়তে থাকে। আর এই বয়স যতই বাড়তে থাকে জীবনে সাকসেস না পেলে আমরা মানসিক কষ্টের ভুগতে থাকি, এবং একসময় হাল ছেড়ে দিয় । শুরুটা আমরা ভালোভাবে করলেও শেষে আমরা অনেকেই সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে পারিনা । আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা বলতে চাই যার কাছে তার স্বপ্নই ছিল জীবন। এই মানুষটির রিয়েল লাইফ স্টোরি সবার জেনে রাখা খুবই দরকার। তাই পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়বেন। এই গল্পটি আপনার চিন্তাধারায় পজেটিভ চেঞ্জ নিয়ে আসবে এবং আপনিও এই মানুষটির মতই আপনার স্বপ্নকে সার্থক করতে পারবেন। 



আমাদের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের একটি দেশ হলো হাঙ্গেরি। অনেকেই হয়তো দেশটির নাম শুনেছেন। কিন্তু Karoly Tackacs এর নাম কি কখনো শুনেছেন? তাহলে চলুন শুরু করি, 1938 সালে হাঙ্গেরি সেনাবাহিনী Karoly Tackacs বিশ্বের সেরা পিস্তল সুটার ছিলেন । তিনি 1940 সালের অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক জয় করার আশা করেছিলেন । কিন্তু অলিম্পিকের আগে, মাত্র কয়েক মাস আগে এই আশা কোথায় যেন হারিয়ে যায় ! অলিম্পিকের কয়েক মাস আগে সেনাদলের প্রশিক্ষণের সময় একটি বোমা তার ডান হাতে ফেটে যায় এবং ডান হাত উড়ে যায়। তিনি এক মাস হাসপাতালে ছিলেন এবং ডান হাত উড়ে যাওয়া ও অলিম্পিকের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবার কষ্টে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। এই মুহূর্তে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো হাল ছেড়ে দিতো এবং সারাজীবন অনুশোচনায় ভুগতো । কিন্তু তিনি ছিলেন একজন উইনার, আর উইনাররা জীবনে যাই পরিস্থিতি আসুক না কেন তার মোকাবিলা করতে জানে , তারা হাল ছেড়ে দেয় না সমস্যার সমাধান যতক্ষণ না হচ্ছে। তিনি সমস্ত দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ডান হাত নেই তো কি হয়েছে তার কাছে এখনও একটি হাত আছে। যা হয়ে গেছে এবং যা নেই তা নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই , বরং যা আছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বললেন, আমার কাছে এখনও একটি হাত রয়েছে তার বা হাত, বা হাত নিয়েই আমি লড়বো, একেই একটি চ্যাম্পিয়নের হাত বানাবো। 


সবার থেকে দূরে গিয়ে সবার চোখের আড়ালে গিয়ে তিনি কঠোর পরিশ্রম শুরু করলেন এবং তাঁর বাঁ হাতকে ডান হাতের মতোই সমান পারদর্শী করলেন। তিনি যখন 1939 খ্রিস্টাব্দে হাঙ্গেরীয়ান ন্যাশনাল পিস্তল শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে উপস্থিত হলেন তখন অন্যান্য শুটাররা তাকে সমবেদনা জানায়, তাকে বাহবা দেন তাদের শুটিং দেখতে আসার জন্য। Tackacs এর উত্তরে বলেন, আমি এখানে দেখতে আসেনি আমি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছি। তারা এটা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে যান তবে এটা তো কিছুই ছিল না । যখন Tackacs এর সাথে তারা কম্পিটিশনে পেড়ে উঠলো না এবং Tackacs বিজয়ী হলেন তখন তারা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যা ঘটলো ! Tackacs বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি এখনও শেষ হয়ে যায়নি । Tackacs এইবার সম্পূর্ণরূপে 1940 এর অলিম্পিকের জন্য তৈরি হলেন। কিন্তু তার জীবনে কিছু যে সোজা ছিল না ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে 1940 এর অলিম্পিক বাতিল হয়ে যায় । তিনি সাময়িক ভেঙে পড়লেও 1944 এর অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

কিন্তু এই সময়ে বিশ্বযুদ্ধ চলতে থাকায় 1944 এর অলিম্পিক ক্যান্সেল হয়ে যায়। তিনি এসময় কিছুই বুঝতে পারছিলেন না, তার সাথেই কেন এমন হচ্ছে ? কিন্তু তিনি এই কঠিন বাস্তবকে মেনে নিতে শেখেন একজন উইনার এর মতন। তিনি হাল ছাড়লেন না, চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। বা হাতকে আরো শক্তিশালী করলেন কারণ , অলিম্পিকে বিশ্বের বড় বড় শুটাররা আসবেন তাদের শক্তিশালী হাত নিয়ে , কিন্তু তাকে তাদের সাথে লড়াই করতে হবে তার বা হাত দিয়ে! আগে তো তিনি ডান হাত দিয়ে শুটিং করতেন এখন তাকে বাঁ হাত দিয়ে করতে হবে । দিনরাত এক করে তিনি লড়াই চালিয়ে গেলেন । 38 বছর বয়সে এসে তিনি 1948 সালের লন্ডন অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল পেলেন । জীবনের এতো প্রতিকূলতা মাঝে শিক্ষা নিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণ করেই ছারলেন। তবে তিনি এখানেই থেমে থাকেননি, 1952 সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে পার্টিসিপেট করেন এবং ওখানেও গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রে বিজয়ীদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যাতে তাদের থামানো সম্ভব নয়। একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা তাদের বড় বিপদ, ক্ষতির মুখে থেকে রক্ষা করে । বিজয়ীরা ক্ষতির মুখে থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে ও পাল্টা আঘাত হানতে জানে। ঠিক যেমন Tackacs কিন্তু তার পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মাত্র এক মাসের মধ্যেই বাঁ হাতকে ভর করে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে,এবং কঠোর পরিশ্রম করে। তিনি যদি ঐ দুঃখে ডুবে থাকতেন তাহলে কখনই এভাবে রিকভার করতে পারতেন না , না মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে কোনভাবেই না। আমাদের জীবনেও ঠিক এরকম ভাবে সময়ের সাথে সাথে নানা সমস্যা চলে আসে । কখনো কোন প্রিয়জনের বিয়োগ, অথবা বারবার চেষ্টা থেকেও সাকসেস না পাওয়া , অথবা অন্যকিছু। তখন আমাদের সেই সমস্যার কথা ভেবে ভেবেই যদি আমরা সময় কাটিয়ে দিই, তাহলে কিছুই করে উঠতে পারব না। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে যা কিছু রয়েছে । আমাদের জীবনে সেটাকেই সম্বল করে আমাদের ফাইট করতে হবে । একজন বক্সার যখন পড়ে যায় তখন তার কাছে 10 সেকেন্ড সময় থাকে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য 10 সেকেন্ড পার হলে তিনি পরাজিত হন। আমাদের জন্য সেরকম সময় সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা না করে সমস্যার কথা ভেবে ভেবেই যদি আমরা সময় নষ্ট করি তাহলে, আমরাও সেই বক্সারের মতোই হেরে যাবো । আমাদের জীবনের অনেক সময় আমাদের অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও আমাদের যা কিছু অবশিষ্ট রয়েছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সব সময় মনে রাখবেন, " there is a way and I will find it " আমাদের অনেকের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাকসেস না পাওয়ায় ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে পড়ি। আমরা তাদের বলবো, বয়সটা কোন ফ্যাক্টর না, সাকসেস হয়নি আপনারা চেষ্টা চালিয়ে যান Karoly Tackacs এর মতন আপনারও একদিন সাকসেস পাবেন । আপনিও পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে শুধু একটু মন শক্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এ জীবন যুদ্ধে । শেষে একটি কথাই বলবো হাল ছাড়বেন না জীবনের শেষ অব্দি লড়াই করুন সাকসেস অবশ্যই পাবেন।


 আপনাদের এই পোস্টটি কেমন লাগলো জানান কমেন্ট বক্সে ।